
বিশ্বে একমাত্র জাতি হচ্ছে বাঙ্গালী জাতি, যারা ভাষার জন্য জীবন দিয়েছে। দীর্ঘ সময় লড়াই সংগ্রাম করে ছিনিয়ে এনেছে বাঙ্গালী জাতির প্রাণের ভাষা, মায়ের ভাষা বাংলা ভাষাকে। ভাষার এ লড়াইয়ে জয়ী হতে গিয়ে প্রাণ দিতে হয়েছে রফিক, সালাম, বরকত, জব্বারসহ অনেককে। তাদের স্মরণ করে পরবর্তীতে দেশের প্রায় প্রতিটি জেলায় নির্মিত হয়েছে শহীদ মিনার। তারই ধারাবাহিকতায় নারায়ণগঞ্জের চাষাড়ায়ও নির্মিত হয়েছে শহীদ মিনার।
তবে নির্মাণের পর থেকেই অযত্ন আর অবহেলায় প্রায় সারা বছরই অরক্ষিত থাকে এ শহীদ মিনারটি। এ সুযোগে শহীদ মিনার ও এর আশেপাশের এলাকায় বেড়ে যায় উঠতি বয়সি কিশোর ও বখাটেদের আনাগোনা – উৎপাত। প্রায় সময়ই দেখা যায়, কিছু বখাটে কিশোর, যুবক এমনকি মাঝে মাঝে বয়স্করাও জুতা পায়ে শহীদ মিনারের বেদীতে দাড়িয়ে, বসে থেকে শহীদ মিনারের অবমাননা করে থাকেন। এমনই এক ঘটনা ঘটে সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে।
সোমবার দুপুরে চাষাড়া শহীদ মিনার এলাকায় দেখা যায়, ভ্যাপসা গরমে জনজীবনের অস্বস্তি কাটাতে স্বস্তির বৃষ্টি শুরু হয়। বেশ কিছু সময় ধরে চলে ঝুম বৃষ্টি। এই বৃষ্টি চলাকালীণ সময়ে কয়েকটি বখাটে কিশোররা আনন্দ উল্লাস করতে করতে জুতা পায়ে উঠে পরে শহীদ মিনারের বেদীতে লাফালাফি করছে। তিন-চারজন মিলে একজনকে শহীদ মিনারের বেদীতে শুইয়ে রেখেছেন এবং আরেকজন তার উপর বুকের উপর বসে আছেন। সকলেই জুতা পায়ে মিনারের বেদীতে অবস্থান করছেন।
এ দৃশ্য দেখে একজন বয়:বৃদ্ধ বলে উঠলেন, এর জন্যই কি সালাম, রফিক, বরকত, জব্বাররা জীবন দিয়েছে। তাদের রক্তের কি কোনো দাম নেই। ভাষার জন্য তারা জীবন দিয়েছিলো, আর এখন বখাটে ছেলেরা জুতা পায়ে মিনারে উঠে তাদের অসম্মান করছে।
নিজাম নামে এক ব্যক্তি বলেন, আসলে ওদের দোষ দিয়ে কি লাভ? শহীদ মিনারের কোনো মা বা বাপ (দেখভালে দায়িত্বরত) নেই। যাদের দায়িত্ব তারা তো শুধু ২১ শে ফেব্রুয়ারীর আগে দুদিন ঝাড়া-পোছা করে চলে যায়। তারপর আর কেউ কোনো খোঁজ রাখে না শহীদ মিনারের, খোঁজ থাকে না দায়িত্বরতদেরও।
নগরবাসীর মতে, নগরীর শহীদ মিনারটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়-দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের। তারা রক্ষণাবেক্ষণ করেনও তবে শুধু ২১ ফেব্রুয়ারীর আগে। কিন্তু তারা যদি সবসময় এ শহীদ মিনারটির রক্ষণাবেক্ষণ করতো তাহলে বাংলা ভাষা, ভাষার জন্য নিহত শহীদ ও শহীদদের স্মরণে নির্মিত এ শহীদ মিনারের কোনো অবমাননা কেউ করতে পারতো না। তাই তারা দাবি জানিয়ে বলেন, অচিরেই সিটি কর্পোরেশনের উচিৎ শহীদ মিনারে রক্ষণাবেক্ষনে যথাযথ, উপযুক্ত ও কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া।
এক্ষেত্রে অনেকে বলেন, ঢাকা সহ দেশের প্রায় জেলার শহীদ মিনারের বেদীর সামনেই লোহা বা স্টিলের পাইপ দিয়ে বাউন্ডারি দেয়া হয়েছে, যাতে করে জুতা পায়ে কেউ মিনারের বেদীতে উঠতে না পারে। সেই সকল শহীদ মিনারের দিকে দৃষ্টি দিয়ে নারায়ণগঞ্জের শহীদ মিনারের বেদীতেও এমন ধরনের বাউন্ডারি বা পাইপ স্থাপন করারও দাবি জানান তারা।
No posts found.